Skip to main content
বাংলায় পড়ুন
আশ্রম ইতিহাস

ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণদেবের মানসপুত্র পূজনীয় স্বামী ব্রহ্মানন্দজী মহারাজ বা রাজা মহারাজের পুণ্য জন্মস্থান এই শিকড়া কুলীনগ্রাম। উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বসিরহাট মহকুমায় অবস্থিত এই গ্রামটি এখন ভারতবর্ষ তথা বিশ্বের শ্রীরামকৃষ্ণ অনুরাগীদের অনেকের কাছেই বিশেষভাবে পরিচিত এবং ভক্তদের কাছে একটি অন্যতম তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে।

১৯৫৯ খ্রীষ্টাব্দে শুভ অক্ষয় তৃতীয়ার দিন তার পবিত্র জন্মস্থানের উপর শ্রীরামকৃষ্ণ মন্দির নির্মিত হয়। সঙঘাধ্যক্ষ পূজ্যপাদ স্বামী শঙ্করানন্দজী মহারাজ শ্রীশ্রীঠাকুর, মা, স্বামীজী ও রাজা মহারাজের পট মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করে তার শুভ সূচনা করেন। সেই থেকে শ্রীশ্রীঠাকুর, মা, স্বামীজী ও রাজা মহারাজের নিত্য পূজা হয়ে আসছে।

১৯৯২ খ্রীষ্টাব্দে এই আশ্রম রামকৃষ্ণ মিশনের শাখাকেরূপে এবং ২০০২ খ্রীষ্টাব্দে রামকৃষ্ণ মঠের শাখাকেন্দ্ররূপে রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, বেলুড় মঠের অনুমোদন লাভ করে। তারপর থেকে এখানে বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে ‘শিবজ্ঞানে জীবসেবা’রূপায়িত হয়ে আসছে।

নিত্য ও বিশেষ সূচী 

মন্দিরে ব্রাহ্মমুহূর্তে নিত্য মঙ্গলারতি হইতে পূজা, সন্ধ্যারতি, প্রতি একাদশী তিথিতে রামনাম সংকীৰ্ত্তন, সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে শ্রীশ্রীঠাকুর, মা, স্বামীজীর জীবনী ও বাণী পাঠ ও ব্যাখ্যা এবং অন্যান্য ধর্মগ্রন্থও আলোচনাহয়।এতৎব্যতীত আশ্রমের প্রতিষ্ঠা দিবস, শ্রীশ্রীঠাকুর, মা, স্বামীজী, রাজামহারাজ, ঠাকুরের অন্যান্য অন্তরঙ্গপার্ষদ ওঅন্যান্য মহাপুরুষদের পুণ্য জন্মতিথি পালন করা হয়।


বাৎসরিক অনুষ্ঠান

রাজা মহারাজের পুণ্য জন্মতিথি উপলক্ষে প্রতি বছর তিনদিনব্যাপী মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান হয়। সঙ্গীত, নৃত্যনাট্য, নাটক, যাত্রা,  গীতি আলেখ্য এবং যুব সম্মেলন  প্রভৃতি অনুষ্ঠানের  আয়োজন করা   হয়। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ সকল গ্রামবাসী, স্থানীয় বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, 

ব্রহ্মানন্দমণিমেলার শিশুকিশোর এবং মহোৎসবে আগত সকল ভক্তবৃন্দ সম্মিলিতভাবে শােভাযাত্রা করে  গ্রাম প্রদক্ষিণ করেন। ঠাকুর, মা, স্বামীজী এবং রাজা মহারাজের প্রতিকৃতি ফুল,  মালা ইত্যাদি  দিয়ে সাজিয়ে সঙ্গীত ও বাদ্য সহকারে গ্রাম প্রদক্ষিণ করা হয়। বৈকালিক ধর্মসভায় শ্রীশ্রীঠাকুর, মা, স্বামীজী ও রাজা মহারাজের দিব্য জীবনী আলোচনা। হয়। ঐদিন আগত সকল ভক্তবৃন্দকে বসিয়ে প্রসাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

ফ্রি কোচিং সেন্টার

দুইটি ফ্রি কোচিং সেন্টার এই আশ্রমের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। একটি শিশু শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত (৩৭জন) ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য; দ্বিতীয়টি পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত (৫৯জন) ছাত্রদের জন্য আশ্রমের মধ্যেই চলছে:  এই তিনটি শিক্ষাকেন্দ্রের সকল ছাত্রছাত্রীই বিদ্যাচর্চার উপকরণ, পোশাক, শীতবস্ত্র পাচ্ছে এবং অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকামণ্ডলী দ্বারা পড়াশুনায় সহায়তা পাচ্ছে।

বিবেকানন্দ শিশুকল্যাণ প্রকল্প—সুন্দরবন

ফ্রিকোচিং সেন্টার ও স্বামীজীর শিক্ষাদর্শকে 

রূপায়িত করার জন্য বিবেকানন্দ শিশুশিক্ষা এবংনৈতিক উন্নয়ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে।এই উদ্দেশ্যে গত প্রায় ১০ বছর ধরে সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চলে যেমন, বরুণহাট, মামুদপুর, দক্ষিণবিশপুর, স্যান্ডেলেরবিলেরকণকনগর, বাকড়া-ডােবর, কোঠাবাড়ী, দুলদুলি, ভাণ্ডারখালি, কালীতলা, মালেকানঘুমটি, সামসেরনগর, ধুচনিখালি, সন্দেশখালি, ন্যাজাট-কালীনগর প্রভৃতি স্থানে প্রাথমিক শ্রেণীর (প্রথম শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত) ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে গদাধর পাঠশালা নামে ১৭ টি ফ্রি কোচিং সেন্টার এই আশ্রমের পরিচালনায় চলছে। এই ১৭টি পাঠশালায় মোট ১৭ জন শিক্ষিকা আছেন এবং ৩৩৫ জন ছাত্র-ছাত্রী আছে। ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে বিদ্যাচর্চার বিবিধ উপকরণ, জামাপ্যান্ট, স্কুলের পোশাক, শীতবস্ত্র প্রভৃতি দেওয়া হয়।

শিক্ষাকল্পে সহায়তা

বিদ্যাশিক্ষার উপকরণের অভাবে যেসব ছাত্র-ছাত্রীপড়াশুনো করতে পারে না, এই আশ্রম থেকে তাদের সাহায্য করা হয়।এই বছর ৩৫৪ জন ছাত্র-ছাত্রীকে খাতা দেওয়া হয়েছে।গত কয়েক বছর ধরে রামকৃষ্ণ মিশন, বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্রমের    মাধ্যমে শিকড়া কুলীনগ্রামএবংনিকটবর্তী   অন্যান্য গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীদেরপড়াশুনারজন্যআর্থিকঅনুদানদিয়েআসছেন।এইবছর২০জনছাত্র-ছাত্রীকেপড়াশুনারজন্য মোট ৪২০০০/- টাকা  অনুদানদেওয়া হয়েছে ।

দাতব্য চিকিৎসালয় ও ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা বিভাগ

এইআশ্রমথেকেহোমিওপ্যাথিক, এ্যালোপ্যাথিকএবংভ্রাম্যমাণদাতব্যচিকিৎসাকেন্দ্রপরিচালিতহচ্ছে।সপ্তাহেদুদিনআশ্রমেরদাতব্যচিকিৎসালয়েএ্যালোপ্যাথিকএবংমাসেদুদিনহোমিওপ্যাথিকচিকিৎসাকরাহয়।বিনামূল্যেপ্রয়োজনীয়ওষুধপত্রওদেওয়াহয়।এছাড়াওপ্রতিসপ্তাহেভ্রাম্যমাণচিকিৎসাবিভাগআশ্রমথেকে১১কিলোমিটারদূরেবেঁড়াচাপাকিলোমিটারদূরেঘোড়ারাসগ্রামেযায়।গতবছরেমোট৯২৭৮জনেরচিকিৎসাকরাহয়েছে।

চক্ষু অপারেশান শিবির

চক্ষু অপারেশান শিবির ও গ্রামের দরিদ্র মানুষদের সেবাকল্পে বিগত কয়েক বছর যাবৎরামকৃষ্ণ মিশন, শিকড়াকুলীনগ্রামের পরিচালনায় চক্ষু অপারেশান শিবিড় পরিচালিত হয়ে আসছে। বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশান, ওষুধপত্র ও চশমা দেওয়া হয়েছে।

দুগ্ধ বিতরণ

সারা বছর ধরে স্থানীয় একশত অপুষ্ট শিশু ও মায়েদের প্রতিদিন সকালে দুগ্ধ বিতরণ করা হয়। আশ্রমের সাহায্যে গ্রামের মায়েরা অক্লান্ত পরিশ্রমে এই সেবাকাজ পরিচালনা করছেন।